ব্যবস্থাপনা কি | ব্যবস্থাপনা কার্যাবলী | What is management in bangla

 ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোম্পানি বা সংস্থাগুলির কার্যকর ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সঠিক management এর প্রয়জন। তো এই ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর রয়েছে যার লক্ষ্য একটি কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যগুলিকে সংগঠিত এবং সমন্বয় করা। 

Contents hide

 এই সংঘবদ্ধ মানব জীবনে ব্যবস্থাপনীয় জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। তো আপনারা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোন কিছু যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। 

ব্যবস্থাপনা কি | ব্যবস্থাপনা কার্যাবলী
Management explain in bengali

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ব্যবস্থাপনা কি | ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী | ব্যবস্থাপনার স্তর গুলো কি কি | ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব কী ইত্যাদি বিষয়। চলুন তাহলে বেশি কথা না বললে ব্যবস্থাপনা বলতে কি বুঝায় এ বিষয়টি জেনে। 

ব্যবস্থাপনা কি  |  What is management in Bengali

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে, তো এই প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে  এবং প্রতিষ্ঠানের উপকরণ গুলি সুস্থ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যেমন পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা ও প্রেষণা সমন্বয়সাধন এবং নিয়ন্ত্রণ কার্য হলো ব্যবস্থাপনা। আশাকরি ব্যবস্থাপনা কি এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে 

কৌশলগতভাবে মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা কে ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা বলে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান নির্দেশনা ও প্রেষণা সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণকে ব্যবস্থাপনা বলে।

ম্যানেজমেন্ট কি এই নিয়ে বিভিন্ন গবেষক, শিক্ষাবিদ নিজের মত প্রকাশ করেছে এই নিয়ে নিচে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা 

ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বা গবেষক বিভিন্ন রকম ভাবে দিয়েছে।

Henri Fayol মতে ব্যবস্থাপনা হলো কোন একটি প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠন সদস্যের প্রচেষ্টার পরিকল্পনা, সংগঠিত, নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া হল ব্যবস্থাপনা। হেনরী ফেয়লকে আধুনিক ব্যবস্থাপনা জনক বলা হয়।

George R Terry মতে ব্যবস্থাপনা এমন এক ধরনের স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যা মানুষ এবং অন্যান্য সম্পদ সমূহ সুষ্ঠ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা, সংগঠিত করা, কার্যকর করা এবং নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া।

Harold Koontz মতে ব্যবস্থাপনা হল এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা এবং বজায় রাখার প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তিরা, দলে একত্রে কাজ করে, কার্যকরীভাবে এবং দক্ষতার সাথে নির্বাচিত লক্ষ্যগুলি সম্পাদন করে।

ব্যবস্থাপনা মানে কি | Management meaning in Bengali

ব্যবস্থাপনার মানে হল কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের উদ্দেশ্য কে সফল করার জন্য যে পদ্ধতিতে কোন ম্যানেজারের অধীনে মানুষকে তত্ত্বাবধান করা হয় সেটি হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা।

Management শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন বা ইটালিয়ান শব্দ maneggiare , ফরাসি শব্দ manage এবং manager এই তিনটি শব্দ থেকে।

Management = Manage + Men + T (Tactfully)

            Manage – পরিচালনা করা

            Men – মানুষদের

            T – Tactfully বা দক্ষতার সাথে

অর্থাৎ ব্যবস্থাপনার অর্থ হল দক্ষতার সঙ্গে মানুষকে পরিচালনা বা ম্যানেজ করা।

ব্যবস্থাপনার স্তর গুলো কি কি ?

 ব্যবস্থাপনার স্তর কয়টি ও কি কি চলুন এই বিষয়টি নিম্নে আলোচনা করি।

ব্যবস্থাপনার স্তর তিনটি

            ১. উচ্চ পর্যয়ের ব্যবস্থাপনা

            ২. মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা

            ৩. নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা

ব্যবস্থাপনা তিনটি স্তর আরো বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. উচ্চ পর্যয়ের ব্যবস্থাপনা

সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ে নির্বাহীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ব্যবস্থাপনাকে উচ্চ পর্যের ব্যবস্থাপনা বলে। সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে কর্মরত ব্যাক্তি রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ব্যবস্থাপনা হলো উচ্চ পর্যায় ব্যবস্থাপনা । 

 প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের নির্বাহীদের কাজ হল , প্রতিষ্ঠানের নীতি কি হবে ঠিক করা।

২. মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা : 

উচ্চ পর্যয়ের ব্যবস্থাপনা এবং নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ উচ্চ স্তরের ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রনীত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে মধ্য পর্যায় ব্যবস্থাপনা বলে।

৩. নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা : 

যে স্তরের ব্যবস্থাপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের কাজ করে তাকে নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বলে।

অর্থাৎ মধ্যস্তরের ব্যবস্থাপনার গৃহীত পরিকল্পনা, নীতি  ও মাঠ পর্যায়ের কাজ এই স্তরে বাস্তবায়ন হয়।

ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা 

 ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বা ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

•✓ উৎপাদন উপকরণাদি ও সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার : 

কোন কিছু উৎপাদনের জন্য যেসব উপাদান বা বস্তু ব্যবহার করা হয় তাকে উৎপাদন উপকরণাদি বলে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে উপকরণগুলি থাকে সেই উপকরণ গুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় ব্যবস্থা পনার মাধ্যমে।

ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার প্রধান উপকরণ গুলি হল ভূমি, শ্রম, মূলধন অর্থাৎ এগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় ব্যবস্থা পনার মাধ্যমে।

•✓ লক্ষ্য অর্জনের সহায়তা :

ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে লক্ষ্য থাকে সেটা খুব সহজে অর্জন করা যায় অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে ব্যবস্থা পনার।

•✓ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : 

নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ বৃদ্ধির জন্য কর্মীর প্রয়োজন পড়ে অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় এর ফলে বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।

•✓ দক্ষতা বৃদ্ধি : 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন সময়, অর্থ, সম্পদ, প্রচেষ্টা ইত্যাদি অপচয় না করে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয় এর ফলে ব্যবসার দক্ষতা বৃদ্ধি হয়।

•✓ যোগাযোগ বৃদ্ধি : 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য প্রচুর কর্মী থাকে এদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে , এই যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। 

•✓ সমস্যা সমাধান :

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন রকম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। ব্যবস্থাপনা বিশেষ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে এবং সফলভাবে কার্যসম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

•✓ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : 

একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পক্ষ থেকে যেমন ব্যবস্থাপক, মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা ইত্যাদি। এসব পক্ষের মধ্যে কোন সমস্যা বা মতবিরোধ হয় তাহলে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেটিকে সমাধান করা হয়। ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি ?

ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

•✓ উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া : 

ব্যবস্থাপনা হলো একটি উদ্দেশ্য মুখী প্রক্রিয়া। প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সেই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সেটিকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

•✓ গোষ্ঠীগত কার্যকলাপ : 

ব্যবস্থাপনা হলো গোষ্ঠীগত কার্যকলাপ প্রক্রিয়া, যেখানে অনেক মানুষ রয়েছে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠান তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

•✓ সর্বজনীন প্রক্রিয়া : 

ম্যানেজমেন্ট একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া। ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য নয় , এটি সব জায়গায় প্রযোজ্য যেমন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি। এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট এর উপস্থিতি রয়েছে, যেমন ধরুন কোন একটি সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিকঠাক না হয় তাহলে সেই অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পাদন হবে না।

•✓ নেতৃত্ব : 

সঠিক নেতৃত্ব ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলে। নেতৃত্বের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার কার্যকলাপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, অর্থাৎ ম্যানেজমেন্টের জন্য দক্ষ নেতৃত্ব সবসময় প্রয়োজন।

•✓ কাজ আদায়ের কৌশল :

ব্যবস্থাপনাকে কাজ আদায়ের কৌশলে বলা হয়, ম্যানেজমেন্টের যে উপায় উপকরণগুলো আছে সেগুলোকে কার্যকর ভাবে ব্যবহারে ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

•✓  ধারাবাহিক প্রক্রিয়া : 

ম্যানেজমেন্ট হলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যবে থেকে কোন প্রতিষ্ঠান চালু হয় সেদিন থেকে ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। যতদিন সেই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আছে ততদিন পর্যন্ত ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া চালু থাকে। 

 

আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিভিন্ন রকম খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারলেন যেমন , ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে | ব্যবস্থাপনা কত প্রকার | ব্যবস্থাপনার মূলনীতিগুলো কি কি | ব্যবস্থাপনা কার্যাবলী কি ইত্যাদি বিষয়। 

ব্যবস্থাপনা কি এই নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ। 

Leave a Comment